১১ বার তিস্তার ভাঙনের শিকার বসতভিটাও শেষ
আব্দুল মালেক ১১ বার তিস্তা নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছেন। এসব দেখতে দেখতে বৃদ্ধ বয়সে এসে তিনি বেশ ক্লান্ত। বাকি জীবনটা পৈতৃক ভিটায় কাটানোর ইচ্ছা ছিল। সেই চিন্তায় সেখানে ঘর তোলেন। বসবাস শুরু করেন। কিন্তু শনিবার তিস্তার করাল গ্রাসে সেই বসতভিটা হারিয়ে গেল।
ঘটনাটি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের সাতালস্কর গ্রামের। শুধু আব্দুল মালেকই নন, দেড় মাসের ব্যবধানে ইউনিয়নের সাদুয়াদামার হাট ও সাতালস্কর গ্রামের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তিস্তা নদীর ভাঙনে পাঁচ শতাধিক পরিবার এখন বাস্তুহারা। কয়েক শ হেক্টর ফসলি জমি এবং বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা নদীতে চলে গেছে। সম্প্রতি এলজিইডি নির্মিত একটি কাঁচা রাস্তার অর্ধেক ভাঙনে বিলীন হয়েছে। এরই মধ্যে সাতটি বৈদ্যুতিক খুঁটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আরো অন্তত ১২টি খুঁটি ঝুঁকির মধ্যে আছে। এলাকায় বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো স্বজনদের মায়া ত্যাগ করে বিভিন্ন এলাকায় বসতি গড়েছে। অনেকে নিরুপায় হয়ে ভাঙনকবলিত এলাকার পাশেই ভাঙা ঘরবাড়ি নিয়ে পরিবার-পরিজনসহ মানবেতর জীপন যাপন করছে।
সাতালস্কর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আব্দুল মালেকের বসতভিটার বেশির ভাগ অংশই নদীগর্ভে চলে গেছে। বাকিটুকুও যেকোনো সময় নদীতে চলে যাবে। কিন্তু এত কিছুর পরও মায়া ছাড়তে পারেননি। স্ত্রী শরীফা বেগমকে নিয়ে শূন্য ভিটায় অসহায়ের মতো বসে আছেন তিনি।
আব্দুল মালেক বলেন, ‘যখনই বাড়ি আন্ধার হয় (গাছপালায় বাড়ি চারদিক দিয়ে ঢেকে যায়), তখনই নদী আসি হানা দেয়। এইদন করি ১১ বার নদী ভাঙ্গি হামার সউক শ্যাষ করি দিছে। শ্যাষ সম্বল প্রায় ৪৫ শতক জমিত কোনো রকমে এক পাশে বাড়ি করি, বাকি কোনাত আবাদ করি খাং। সেকনাও এবার নদীত গেল। ’
মালেকের স্ত্রী শরীফা বলেন, ‘নদী ঘরবাড়ি সরবারও সমায় দেয় না। বাড়ির মেলা মালামাল নদীত চলি গেইছে। নদীত পানি কম, নৌকা আটকে যায়, তাই মালামাল ওপারে যাবার পাচ্ছিনে। ’
ভাঙনের শিকার হাজিরুদ্দিন (৭০) বলেন, ‘হালগিরিস্থ সবি আছিল। নদী সব নিয়ে গেছে। নদীর এপার ভাঙলে, ওপারত যাই। এইদন করি তেরোবার বাড়ি ভাঙা পচ্ছে। ’
সাদুয়াদামার হাটের গোলজার হোসেন (৭০) বলেন, ‘নদীত তেমন পানি না বাড়লেও গত বৈশেখ মাস থাকি নদী ভাঙ্গা শুরু হইছে। নদী একনা দুরত আছিল, দেইখতে দেইখতে হামারগুলের বাড়ি ভাঙ্গি গেইল। ’
স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে তিস্তার ভয়াবহ ভাঙন চলে এলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কোনো কার্যকর ভূমিকা নেয়নি। এমনকি তাদের কাউকে চোখে পড়েনি। ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে কয়েক কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, পুরাতন বজরা বাজারসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
বিস্তারিত দেখুন ১১ বার তিস্তার ভাঙনের শিকার বসতভিটাও শেষ
ছবি: কালের কণ্ঠ